পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র - পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য

পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের পূর্বনির্ধারিত প্রতিচ্ছবি। ব্যবস্থাপনা কার্য প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা প্রথম ও প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ । এর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যা ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কার্য হতে একে স্বতন্ত্র রূপ প্রদান করেছে । নিম্নে এর বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো :

১. পরিকল্পনার প্রাথমিকতা ও মুখ্যতা (Primacy of planning) : পরিকল্পনা হলো ব্যবস্থাপনার প্রথম ও মৌলিক কাজ । এটি অন্যান্য সকল কাজের ভিত্তিস্বরূপ। কী করা হবে শুধুমাত্র এতটুকু ঠিক করাই পরিকল্পনা নয় । বরং কখন, কিভাবে, কার দ্বারা, কত সময়ে, কোন কাজ করানো হবে ইত্যাদি বিষয়ও পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত । তাই সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সকল কাজেই পরিকল্পনার অনুসরণ করা হয় ।

২. চিন্তন-মনন প্রক্রিয়া (Mental-thinking process) : পরিকল্পনার বিষয়টি চিন্তার সাথে সম্পৃক্ত । যদিও পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয় তথাপিও এর মূল উদ্দেশ্যই থাকে চিন্তাকে অধিক কার্যকর করা। এজন্য বলা হয়, “পরিকল্পনা হলো কাজ শুরুর পূর্বে চিন্তা-ভাবনার প্রক্রিয়া” (Process of thinking before doing)। তাই পরিকল্পনা কোনো শারীরিক বা বাহ্যিক (Physical) কাজ নয় । এটি চিন্তন-মনন প্রক্রিয়া ।

৩. ভবিষ্যৎ কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে অনুমান (Assumptions regarding future course of action): পরিকল্পনা সব সময়ই ভবিষ্যৎ অনুমানের সাথে জড়িত । এ অনুমান শুধুমাত্র কী করা উচিত বা কি করলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় । বরং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশ বা পরিকল্পনা অঙ্গন কেমন থাকবে এবং গৃহীত পরিকল্পনা সে সকল পরিবেশের মধ্য দিয়ে কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তাও অনুমান করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে । অর্থাৎ সঠিক পূর্বানুমান ভবিষ্যৎ ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা দূর করতে সহায়তা করে ।

৪. পরিকল্পনার উদ্দেশ্যমুখিতা (Goal-orientation of planning) : পরিকল্পনা সবসময়ই একটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিরূপিত হয় । যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ১০% উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় তবে উক্ত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিক্রয় বৃদ্ধি, মেশিনের শ্রমঘণ্টার অপচয় হ্রাস বা যন্ত্রপাতি উন্নয়ন, প্রয়োজনে  শ্রমিক-নতুন কর্মী নিয়োগ, অতিরিক্ত কাঁচামাল সংগ্রহ ইত্যাদি সকল বিষয়ে অতিরিক্ত পরিকল্পনা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে । 

৫. পরিকল্পনার তথ্য নির্ভরশীলতা (Dependency of information of planning) : অতীতকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা করা যায় না। তাই পরিকল্পনা প্রণয়নে সব সময়ই অতীতে কী ঘটেছে তার মূল্যায়ন করতে হয়। এজন্য বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণের প্রয়োজন দেখা দেয় । শুধু প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই নয় বাইরের বিভিন্ন বিষয়ও বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজনে বিভিন্ন পক্ষের নিকট থেকেও তথ্য সংগ্রহ করতে হয় । এতে পরিকল্পনার মান বৃদ্ধি পায়।

৬. উত্তম বিকল্প (Best alternative) : বিকল্পসমূহের মধ্য থেকে বাস্তবতা বিবেচনায় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বিকল্পটিকেই উত্তম বিকল্প বলে । পরিকল্পনা বলতে কার্যত উত্তম বিকল্প গ্রহণকে বুঝায় । উদ্দেশ্যার্জনে একাধিক বিকল্প পন্থা অনুসরণ করা যেতে পারে । বিকল্পসমূহের মধ্য হতে সবদিক বিচারে উত্তম বিকল্প গ্রহণই পরিকল্পনা হিসেবে গৃহীত হয় । ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে একজন ব্যক্তি যে রুট ঠিক করবে তাই পরিকল্পনার আওতায় আসবে ।

Content added By
Promotion